
জয়শীলা গুহ বাগচী
মহামারী ও অনন্ত ছাদজীবন
(১)
একটি দুরন্ত ছাদ
আমার হাত থেকে আলজিভ পর্যন্ত
ছেয়ে যাচ্ছে নিমেষে নিমেষে
ছাদের অঙ্ক থেকে
টুপটুপ খসে পড়ছে আমি-জল
কৌণিক হতে হতে
নিজেকে মনে হচ্ছে করুণ রঙের
এইসব রঙে অসীম পালকের শালিখরা থাকে
থাকে কিছু উড়ন্ত মাকড়শার চোখ
চামড়ার ভেতর ছাদের রূপরেখা
ছাদের ক্ষিদে তেষ্টার বাতাস
আমি মাকড়শা ডাকি
শালিখ ডাকি
গলার ভেতরটা ক্রমাগত ছাদ হয়ে উঠলে
পাথুরে শরীর থেকে
দৃষ্টি হয়ে উড়ে যাই
(২)
ছাদের ওপর হালকা চাঁদের সর পড়েছে
ছাদ চেটে দেখি
মুগ্ধের ভেতর কতটা নরম হয়েছে সে
নিজের সামান্য সময়টুকু দিই
তার ভেতর অনামিকা আর কড়ে আঙুলের
নিবিড় দৃষ্টি লেগে আছে
আর কিছু নেই
এইসব চেনা অচেনা ছাদ চুলে বেঁধে
পার করি অতিমারীর ডুবজলের শ্বাস
আমাদের তো সবুজ ঘুমের কথা ছিল
অথচ ছাদ জুড়ে সাদা কুয়াশার স্বাদে
ভেসে আছে ভুল অঙ্কের স্মৃতি
স্মৃতির মুখ থেকে হালকা চাঁদ
গলে পড়ছে
হে আমার ছাদ ঈশ্বর
হে স্মৃতি-জলের অনন্ত
ভালো থেকো…
(৩)
শিরদাঁড়া্র ভুল থেকে
ক্রমশ নিজেকে বেছে তুলছি
ছাদের শরীরে অহং ভুলে তবেই যেতে হয়
তারপর আমাদের প্রত্যেকটি নারকেল পাতায়
টুপটাপ খসে পড়ে
স্বাতী আদ্রা রোহিণী মৃগশিরা…
ছাদও চলতে থাকে নক্ষত্রের পথে
কেশরগন্ধে ভরে ওঠে নাম্বারহীন টেলিফোন
ফোন বাজে…
ছাদ আগলে রাখে
সেসব জল-বিষুবের ডাক
আমি তখন কুড়িয়ে নিই
ভুলে যাওয়া সিনেমার ফ্রেম
কিশোরী গানের ওপার
সাইকেলের খঞ্জনির আলো
ফুসফুসের পাখি বাতাস
আর মাথার ভেতর
নানারকম বৃষ্টির ডাইমেনশন
(৪)
ছাদ গুটিয়ে রাখছি
রাজনৈতিক গাছ-গাছালির শেকড় কাটছি
অথচ কুমড়ো পাতা ফুল প্রজাপতি চুঁইয়ে
একটা বাতাসের গান নেমেছিল
নেমেছিল হৃৎপিণ্ড রঙের আলো
সেসব ভুল উপকথার চিহ্ন
এলিয়ে পড়তেই
অজানা সব শেকড়বাকড় ছড়িয়ে গেল
আমাদের মাথা পর্যন্ত
তার খাঁজে আমার অনেক
মৃত পা, মৃত হাত, মৃত জীবন আটকে আছে
আটকে আছে বিশ্বাসের দেহ
আমি ছাদ মেলে দিচ্ছি না
মেলে দিচ্ছি ছাদের নিস্তব্ধ ধুলো
আর চাঁদে ফেরা নদীর দীর্ঘশ্বাস
(৫)
ছাদের সঙ্গে বনিবনা হতে সময় লাগে
সে ফিসফিস ক’রে
পুরোনো লণ্ঠনের আলো ফিরিয়ে নিতে বলে
আমি তার জীবনের নির্ঘণ্টে
কোন অ্যান্টাসিড দিই না
সে নিজেই জানে কীভাবে
হাওয়ার দিক বদল করা যায়
অথবা নিজের ডানার মাপে
ছেঁটে নেওয়া যায় পৃথিবী
ও শুধু আমার জামার সুতোয়
আলোকবর্ষ সমান একটা গান বুনে দেয়
আমার অতীত থেকে ফুলের গন্ধওয়ালা
সাবান এনে দেয়
আমি রোজ ওকে নতুন এলাচ দারচিনি দিই
ছাদের দৃষ্টির ভেতর
যেসব দর্জিরা থাকে
তাদের নাম ঠিকানা লিখে রাখি
নিজের ঝুল বা সাইডটা অলটারেশন দরকার
জীবন আর আমি বড্ড আঁটাআঁটি হয়ে আছি
একে অন্যের ভেতর