
ওবায়েদ আকাশ
১. এক প্রকারের চাওয়া
আমার দুটি সন্তান, তারা
অচলায়তন থেকে বিদ্যায়তন– দিনরাত দাবড়ে বেড়াতে শিখেছে
ওদের কারো হাতের কলম এবং
কারো হাতের ঝুনঝুনি থেকে দীর্ঘ চল্লিশ বছরের দূরত্ব মেপে
এই মাত্র কুমার নদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছি। আর দেখি
বড়শিতে আটকে পড়েছে তুমুল শৈশব–
সমস্ত শারীরিক কসরত দিয়ে বড়শিটি টানছি আর
ক্রমেই তা ভারী হয়ে হয়ে কখনো উঠে আসছে আমবাগান, ঝাউবাগান
আবার কখনো দেখি রাইসর্ষের মাঠ, চলনবিলের ঢেউ, সবুজ কলমির দাম
এবার যখন শোল বোয়াল মৃগেলের লেজে তাড়া দিতে দিতে বাড়ির দিকে
ছুটছি; আমার সন্তানেরা মোবাইল ল্যাপটপ কিংবা অন্য কোনো
প্রাযুক্তিক বোঝাপড়া নিয়ে দিনের পর দিন ভবিষ্যৎ ভারী করে তুলছে
এবার মনে মনে ভাবছি যে, তাদের পিতার আসনে বসে
এমন কিছু চাইতেই পারি : যাতে একটিমাত্র সুইচ টিপলেই
মুহূর্তে ফিরে পেতে পারি ছেলেবেলার হারানো স্মৃতি বিল, ঝিল, নদী
অকৃত্রিম সবুজ প্রকৃতি থেকে ঝড়বাদল, আউল বাউল, জারি সারি গান…
আর তুমি কল্কেপাড় শাড়িতে সেজে গরুর গোয়ালে ধূপ দিতে যাবে!
আর সখীরা সকলে ঢলাঢলি করে, ছুটে যাবে কলাইয়ের মাঠে
ফুঁ দিয়ে ওড়াতে থাকবে অনূর্ধ্ব কিশোরী বয়স
২. প্রাকৃতিক সত্য
মায়ের মুখ থেকে শোনা প্রতিটি গল্পই
প্রাকৃতিক সত্যে ভরপুর
আমার মায়ের প্রতিটি উচ্চারণ এখন
কোথাও না কোথাও কোনো গভীর অরণ্য কিংবা
সামুদ্রিক অবয়ব নিয়ে বেঁচে আছে
জানি যে মায়ের প্রতিটি কথা কিংবা
একটিও বাক্যাংশ আমার স্মরণে থাকবার কথা নয়
কিন্তু তার কবরের পাতাবাহার ও শেফালিফুলেরা
প্রত্যহ নিয়ম করে
বিচিত্র রঙ ও গন্ধ পাঠিয়ে থাকে–
ভেবে তাদের বলি বলো দেখি প্রতিটি সূর্যাস্তকালে
আমার মায়ের মুখ কত দূরব্যাপী বিস্তৃত থাকে?
তখন কেউ কেউ যেমন মায়ের হাতের রান্নার
শংসা রচনা করে, কেউ কেউ আবার
মায়ের মুখে শোনা গল্পে পৃথিবীকে প্রাকৃতিক করে তোলে
৩. উপন্যাসের প্রেক্ষাপট
চাঞ্চল্য ছাপিয়ে অবিদ্যার সিংহাসন এখন
জলের ওপর মাছেদের যৌথ মিছিলে
এ নিয়ে ট্রিলজি উপন্যাসের লেখক
পর্যটনের দিনগুলো ঘামের দরে বিকিয়ে চলেছেন
দেখছি, উপন্যাসের প্রারম্ভ ঘিরেই
জলের নিচে বিদ্যাভ্যাসের কচি কচি পাতা
এবং মীন বিদ্যার সম্মানিত সদস্য সদস্যা
অনর্গল বুদ্বুদে সমুদ্রপৃষ্ঠে ছড়িয়ে দিচ্ছেন বিদ্যাভ্যাস
ফলে তিরতির করে হাওয়ার কাঁপনের সঙ্গে
যখন একটু একটু করে শীতও ছড়িয়ে পড়ছে
শিশুরা ভোরের রৌদ্রকে পড়তে দিয়েছে
উদোম শরীরে লেখা বর্ণমালার উষ্ণতর পাঠ
মুহূর্তে বুঝি, চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে
বজ্রপাতের প্রবল শলাকা। তখন ঔপন্যাসিক
নিভৃতে দাঁড়িয়ে ভাবেন, শাশ্বত ভ্রমণে
এই বুঝি বিদ্যা-অবিদ্যার প্রকৃত যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা
যেখান থেকে শুরু হতে পারে
পর্যটনে লেখা উপন্যাসের তুমুল প্রেক্ষাপট
৪. বসন্ত আঁকতে গিয়ে
এখন একা একাই সুখ আসে
তোমার ব্যবহার বিষয়ক গ্রন্থাবলি
ভূগোলের বাকলের নিচে লুকিয়ে রেখে
প্রচ্ছদে ছড়িয়ে দেই মেহগনির
ফল ফোটার রীতি
রাত্রির গমগম বিলাস ঘিরে
দূর নদীদের হাওয়া, তিল ফুলের মৌ
আম্রকাননে সবুজ সংকর ধুলোয়
মধ্যরাত্রিক চাঁদ খেজুরের হাঁড়ির মতো
গর্ভবতী থাকে
একবার চাঁদোয়া টাঙিয়ে
ঘোরতর জিজ্ঞাসায় বাঁচে বয়স্ক রাতের
কুয়াশা। কে তবে ঘাসের প্রসিদ্ধি ঘেঁটে
শিশুতোষ নিসর্গ শাখায় চড়িয়ে দিয়েছিল
অপারেশনের ঘুম? আর সেই থেকে
চোখ খুললেই চারদিকে অবিশ্বাস্য
আফিম ফোটার ঘ্রাণ সুনিশ্চয়–
দোলপূর্ণিমার ঘাড়ে সর্বস্ব হারানো যারা
খুঁজে নিয়েছিল বায়োস্কোপের চোখ
সেইসব চোখভর্তি সুমুদ্রিত শৈশবের
জাদুর টিকেট, সুপাঠ্য ভ্রমণ সংহিতা
এবং প্রাণান্ত চারণে পথে পড়ে ছিল
লাল লাল ঐশ্বর্যের বোঁটায়
বহুমন্থিত আমাদের বিপুল কৈশোর
বসন্ত আঁকতে গিয়ে মুখভর্তি গজাল দেখো
বিবিধ নতুন পাতা
এবার তোমার কথা বলো