
মোস্তাফিজ কারিগর
১.অবনাগমন
বাঘের লেজে বসে থাকা জোনাকির আলো খেয়ে
হেঁটে যাচ্ছি, খানাখন্দ মাড়িয়ে;
ভাঙা সাঁকোর উপর
জীবন ঝুলে আছে
জলের নিচে চাঁদের উলটো পিঠ
নেমে যেতে যেতে
একা-নির্জন মানুষের আঙুলের শ্যাওলায় দেখি-
সবুজ আলোর অঙ্কুরোদ্গম বেয়ে
সূর্যের দিকে উঠে আসছে পৃথিবী
২.পিটার অরলভস্কির কবিতা
পিটার অরলভস্কির আকাশ-দুপুরবেলা
বসন্তের উড়োজাহাজ হয়ে ঘরে ঢুকে নাচলো
বছর দু’য়েকের কন্যা আমার বুকের উপর
গীতবিতানের পাতা উল্টে উল্টে
খরদুপুরের ঠোঁটে ঝুলিয়ে দিলো কিছু পাখি
শীতপাখিদের রেখে যাওয়া পালকে
হঠাৎ কখনো আমলকি বাগানের রোদ নামছে
কিছু পাতার মর্মর লাফিয়ে চলেছে
টাইপরাইটারের নির্জন আঙুলে
টাইপরাইটারের উপরে বসে কবিতা প্রথম
উনিশশো সাতান্নে
পিটার অরলভস্কির চশমা পরেছিলো
৩.বসন্তের অনাদি রেখারূপ
ষাট ছোঁয়া মায়ের আঁচলে ফিরেছি
চৌদ্দশো ছাব্বিশের ফাল্গুনে
ঘরের পেছনে মুকুলে নতভার আমগাছেরা
সমস্ত শরীরে মায়ের ছবি এঁকে রেখেছে
পাশের পুকুরে রাতের ফাগজ্যোৎস্না
মায়ের মুখ হয়ে ভাসছে
মায়ের শরীরে আমি জ্যোৎস্না মেখে খাই
মায়ের চোখে দ্বিপ্রাহরিক পানকৌড়ির ছায়া
পতনোন্মুখ বিষণ্ন অন্ধ রেলগাড়ি
পাশের স্টেশনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে
মা বললেন-আপাতত ভারতবর্ষে যেওনা এখন
ঢাকাতে ধুলো, উড়ন্ত অসুখ
মায়ের আঁচলে সমস্ত করোনা ভাইরাস
ফুল-পুষ্পের অনাদি বসন্ত হয়ে আছে
৪.সঞ্চয়
শীতশেষের পাতাশূন্য বৃক্ষের শাখা বেয়ে
চাঁদ নেমে নেমে আসে
আমার পায়ে চলার খাড়িপথে;–
তবুও-তাকে ফেলে রেখে
অনন্ত ভাঙাব্রীজ পার হয়ে ঘরে ফিরি, ক্লান্ত-
প্রতিদিন তোমারও কর্মশ্রান্ত ঘুমের পাশে দাঁড়িয়ে
আমার চোখের পাতারাও
পাথরের চাঁইয়ের নিচে পড়ে থাকে
পাখি-কূজনের কাছে সকাল আসার আগেই
তোমার পা চলে যায়
যোজনান্তের চাকুরির পৃষ্ঠায়
আমার ভাঙা ঘুমের পাশে
হু হু করা তোমার গন্ধ পড়ে-মরে গোঙায়
দেখতে দেখতে সমস্ত শীতকাল চলে যাচ্ছে
তোমার প্রভিডেন্ট ফান্ডের দিকে;
আধাখ্যাঁচড়া বসন্ত-বর্ষা নিয়ে
কেঁদে-কেটে ব্যাংকে ঘুমিয়ে আছে
আমার এফডিআর;
বয়স পূর্ণ হলে-
পাতারা ঝরে পড়বে তোমার আমার
অশীতিপর হলুদ শরীরে
দু’জনে নিজেদের আর্ত জড়িয়ে ধরে
ব্যাংক থেকে তুলে নেবো
জমিয়ে রাখা আমাদের রক্ত