
অনিন্দিতা গুপ্ত রায়
দহনকাল
এক
কিছুই আর একরকম থাকে না। প্রতিটি কাঠামোর গা থেকে রঙ ও মাটি
ধীরে ধীরে খুলে গেলে, ধুয়ে গেলে
নদী জানে কতটুকু রক্তপাত দীর্ঘস্থায়ী।
হিসেবের গরমিল মেলাতে সারাদিন প্রলাপ বকে আর পারাপার করে
অন্ধ মাঝি, দিকচিহ্নহীন।
দীর্ঘ যতিচিহ্নের মত রেলব্রিজ সমাপন বিন্দুর কাছাকাছি পৌঁছিয়ে দেয়।
শূন্য কলসি ভরে জল ভরার খেলায় শ্যাওলা ও বিষাক্ত লতাগুল্ম শরীরে মেয়ের।
সম্ভাবনাময় প্রত্যেকটা নির্বাক থাকার ভিতর থ্যাঁতলানো শিউলি আর কটূ উচ্চারন মাখা বাতাস।
ছাই হয়ে যাওয়ার পরও যার চোখের ভিতর উড়ে এসে পড়া
থামানো যাচ্ছে না আজকাল!
দুই
চামড়া পোড়ার গন্ধ তাড়াতে শরৎ সাজাচ্ছি আয়োজনে। তবু মহাকাব্যের পাতা থেকে নাছোড় উইপোকা উড়ে উড়ে ঢেকে ফেলছে ভাতঘুমের লাবণ্য আর স্ফুরিত ঠোঁটের ফুটে থাকা ক্রিমসন। উৎসবের গায়ে কিছুটা মাংসপোড়া সোমরস সহযোগে বিধিবদ্ধ, প্রভুও জানেন! আঁকা চোখের গর্তে রঙ ঢেলে নিকিয়ে দিয়েছি লবনাক্ত চেয়ে থাকা। গোপন শ্মশান থেকে ধোঁয়া ও আগুন দেখে ফেলে বিসর্জনের বাজনা থামে না কিছুতেই, বধিরতা স্পর্শ করা অবধি!
তিন
জানলা ও দরজার বন্ধ বা খোলার
ভঙ্গীমা থেকে টুকে রাখি কলকাকলি
চিলের নখের ধারে ঝুলন্ত চড়ুই
চড়ুইয়ের ভাঙা ঠোঁটে কচি ঘাস
ঘাসের ভিতর আঁটা লালকালো পোকা
পোকার শরীরে যত জমে থাকা মাটির শরীর…
এসবই ফ্রেমের ভিতর মাপে মাপ।
তারপর ব্যক্তিগত কথামালা পড়ি ক্ষমা ও ক্রোধের।
অনুতাপ বড়ো পবিত্র শব্দ জেনে যতবার অস্ত্র ভাসাই—
ততবার প্রতিরোধহীন দেহ এফোঁড়ওফোঁড়।
রঙিন পালকে রক্তের দাগ শুকিয়ে উঠলে
পরিবেশন করি কেটে রাখা হৃৎপিন্ড।
সামান্য পোড়া গন্ধ যাকে আরো স্বাদু ও পাচ্য করে তোলে!