এসব কি সত্যি, না হ্যালুসিনেট করেছিলাম, না কি পুরোটাই আমার বানানো – একটা প্রতিশোধের গল্প? এসব কথা অবশ্যই পরে উঠেছিল কিন্তু তা পরেই বলব’খন। সে রাতে আর তেমন কিছু ঘটেনি। ওহ হ্যাঁ শুনেছিলাম নিচের বাড়িতেও মি আরো হট্টগোল করে, দারোয়ান ডাকতে হয় তবে এর বেশি কিছু নয়, বুঝলাম এরা অভ্যস্ত এতে, আর ঘরের কেচ্ছা ঘরেই থাকা ভাল, বিশেষ করে সমাজের মান্যিগণ্যিদের।
তা আমিও কি তাই চাইনি? কিন্তু তা হল কই?
গল্পের শেষ
সব কিছুই স্বাভাবিক হয়ে আসছিল। অন্তত তেমনটা মনে করা যেতেই পারে। সেদিন রাতের ঘটনাপ্রসঙ্গ আমরা কেউ আলোচনা করিনি। আমরা, মানে আমি ও লাই-লা। বাকিদের ব্যাপার জানি না, রে-র সঙ্গে এক দু’বার কাজের কথা হয়েছে অবশ্য – লাই-লাকেও দেখলাম ব্যস্ত, বোধহয় তার বুটিক নিয়ে।
তারপর সেই দিনটা। সন্ধ্যাবেলা ইনস্টাগ্রামে দেখি লাই-লা ও মি, সঙ্গে রে-ও আছে। আমি কী করব বুঝলাম না। লাই-লা বাড়ি ফিরতে তাকে প্রশ্ন করতে যাব, কী প্রশ্ন করব জানি না। লাই-লাই হেসে বসাল আমায় চেয়ারে – ‘শোনো’ বলে সে নিজে আমার সামনে বসল, ‘রাগ কোরো না, তুমি ইনস্টাগ্রাম দেখেছো জানি, কথাটা মন দিয়ে শোনো, রে-র একটা গল্প নিয়ে সিনেমা হবে। অন্য রকমের কাজ, মি অভিনয় করছে, আমাকেও চায় নিতে এবং…’
‘এরপরও’ আমি চেঁচিয়ে উঠতে গেলাম, লাই-লা থামিয়ে দিল, ‘পুরোটা শোনো, বলছি না অন্য রকমের কাজ, কথা হল তোমাকেও চায় ওরা।’ ‘মানে!’ আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম, এর আবার নতুন কী ‘তোমাকেও একটা চরিত্রে ভেবেছে। আমি, মি, তুমি একটা স্যুররিয়াল গল্প…’ সে চুলের মধ্যে দিয়ে হাত বোলালো, আদুরে গলায় বলল, ‘প্লিজ না বোলো না।’
আমি গদি আঁটা চেয়ারে টিকটিকির মতো সেঁটে গেছি, ‘তুমি, তুমি, করতে বললে এত কিছুর পরও!’
‘ওহ প্লিজ’ সে হাতপাখা নাড়ানোর মতো তার চেটোটা নাড়াল, ‘ওসব কেউ মনে রাখে না কি?’ আমি চেয়ার থেকে ওঠার আগেই সে এসে ঝুঁকে আমার গলা জড়িয়ে ধরল, ‘ভুলে যাও ওসব, কিচ্ছু হয়নি সোনা, কিচ্ছু হয়নি, সেদিন সবাই একটু বেশি ড্রিঙ্ক করে ফেলেছিলাম…’ সে যখন ফিসফিস করে আমার কাছে বলছিল, আমি তার মুখ থেকে মদের গন্ধ পেলাম, হালকা, পারফিউম-এর গন্ধের সঙ্গে মিশে, আমি আর কিছু বলতে পারলাম না – ক্রমশ যেন অক্টোপাসের শুঁড়গুলো একটা একটা করে জড়িয়ে নিচ্ছে – লাই-লা, রে, মি সব্বাই – আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল।
সিনেমায় মি ও লাই-লা প্রেমিক, আবার লাই-লা ভালবাসে আমাকে, একজন গল্পকার গল্পটা বদলে বদলে যাচ্ছে, সে দেখছে আর অপছন্দ হলে বদলে দিচ্ছে সিন, রে সেই লেখক – তার চোখের সামনে মি, লাই-লা আর এই অধম শরীরে শরীর লাগিয়ে – যেন অর্কেস্ট্রায় কাউন্টার পয়েন্ট (যা রে আমায় বোঝাচ্ছিল), শুধুমাত্র একটা শাড়ি জড়ানো লাই-লা, মি-র হাত তার পাছা আঁকড়ে – এ দৃশ্য আমার পক্ষে সম্ভব নয়, আমি বাথরুমে বমি করতে থাকি, ফিরে এসে বাড়িতে সারা গা জ্বরে টলছে। ঘরে ফিরেছে লাই-লা ও মি – ওরা আমাকে কী সব বলল, মি চাবির রিং ঘোরাতে ঘোরাতে বেরিয়ে গেল। আমার কোনো উপায় নেই আর। খোলা বারান্দা থেকে নিচে, আকাশ অনেকটা, অনেকটা মুক্তি শরীরে ঝটকা মেরে ভরকেন্দ্র বদলাতেই, আহ মুক্তি…
ব্যাপারটা নিয়ে গুজুরফুসুর বেশ হয়েছিল। যদিও আমি নেশাগ্রস্ত ছিলাম এ কথা অজানা থাকেনি। অ্যালকোহলিজম, ডিপ্রেশন কথাগুলো উড়ে বেড়ায় এখন।