
রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়
বোধি
১
এই হলো গিয়ে ইচ্ছেভুবন।
তুমি হাঁটছো। ওপরের দিকে, আরো ওপরের।
অনেকটা উঠে এলে এই যে, আকাশ আরো নীল, ঘন সন্নিবদ্ধ, তোমার ওপরে তার এক দুধ শাদা ছায়া ফেলবে। তোমার মনে হবে, হতেই হবে, এখানে কিছু আছে। এখানে কিছু থাকে। থেকে যায়।
পথ তো নয়, যেন পালা দিয়ে আঁকা। তুমি যেখানে টিপে টিপে পা ফেলছো সেটাই। যে আগে গেছে, বা, পরে আসবে সে তো তারমতো। তার পথের মতো।
এই পাকদণ্ডি র পরতে পরতে
ধূপছায়া। তুমি ভাবছো পরের বা, তার পরের বা, তারও পরের বাঁকে ঋত্বিক রোদ এসে পড়বে। তখন হয়তো তুমি তাকে দেখবে, লম্বকর্ণ তিনি, একটা ইজিচেয়ারে পা মেলে বসে আছেন। কনিফারের ফাঁক দিয়ে যেটুকু দেখা যায়। পড়ছেন। হতে পারে তারই জন্ম কাহিনি।
তুমি ভাবছো।
তাঁর হাতে তোমার ধূমায়িত কফি। তাঁর গলায় জড়ানো তোমার প্রিয় উড়নি। তুমি আর একটু এগোলে দেখতে পাবে তিনি একা নন।
তারা রয়েছেন। তাহারা।
তুমি ভাবছো।
অশ্রুজাতার দিকে তাকিয়ে তুমি দেখছো এই অপার নভোনীল শূন্যতা মায়ার কোলে এসে বসেছে।
শুনছো প্রেম তার আলম্ব।
২
অতঃ কিম?
এতক্ষণ ধরে অবলোকন করে তুমি নিজেই এখন অবলোকিত। অবশ্রুতও।
এসবই তুমি চেয়েছো।
দেখতে। শুনতে।
দেখতে ও শুনতে।
এই ছায়া ও ছবি মনে করতে করতে তুমি নেমে যাবে স্থির করলে। তারা বার্চের ফাঁকে ফাঁকে
উন্মুক্ত হাওয়ায় দ্রুতি লাভ করলো। তুমি জানো আগে কী ঘটেছে। তুমি জানো পরে কী ঘটবে।
তোমার আসনখানি নিজেই বহন করে নিয়ে যাচ্ছো তুমি। হেথা হোথা অন্য কোথা পাতবে।
একটা জন্ম পেরিয়ে অন্তরের দিকে, স্মৃতিশূন্য, যতক্ষণ না তুমি আবার স্মরণ বিস্মরণ শেষে অবিস্মরণের দিকে হেঁটে যাচ্ছো। হয়ে উঠছো নিজেই নিজের প্রার্থনা ও বরাভয়।
ঝুলি থেকে আয়োজন বের করে মঞ্চ সাজাচ্ছো।
খসড়াটি উল্টে রাখছো মঞ্চের ওপরে।
তারপর দর্শকাসনে গিয়ে চুপটি করে বসছো।
ধ্যানস্থ হচ্ছো।
ধ্বনি উঠছে এই সর্বম শরণম গচ্ছামি।