
মধুপর্ণা রায়
মধুরিমা…
ভালো না লাগার একটি ভালো লাগা আছে। বিন্দুবৎ মধুরিমা! “মধু চাই…. মধু…” বলে বলে যে শক্ত লতার মতো মেয়েটি মাঝেমধ্যেই গলিতে হাঁক দিয়ে যায়…. আমি মনোযোগে দেখেছি, তার কোথাও একটি এক বিন্দু ‘না ভালো লাগা’ রয়েছে। আর সেখানে বিন্দুবৎ টলটলে মধু। এই না ভালো লাগাকে সে অগ্রাহ্য করেনি। ভীষণ করে গ্রাহ্যও করে না। সে দিব্যি মধুর জন্যে হাঁক দিয়ে যায়।
সকলেই আসলে মধু চায়। বনের মধু। চাক- ভাঙা। হিসেব করে, নেড়ে- চেড়ে, ঝাঁকিয়ে- চেখে যাচাই করতে যায় তারাই যারা কেউ-ই বনের মধু চেনে না। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করি…মেয়েটির “না ভালো লাগা” সব যেন কৌতুকে হেসে ওঠে। ঝিকিয়ে ওঠে কালো চোখের তারা। সে তার শরীরকে আলগা বিদ্রুপে ঠেলে চলে যায়। তার বুঝি ভালো লাগে না।।
আমি অবশ্য কোনোদিন তাকে ডাকিনি। চাক- ভাঙা মধু কেবল চাকেই থাকে, এ-ও আমি বেশ জানি। জানি, একমাত্র মৌমাছি তার খাঁটিত্ব চেনে। অংক কষে, প্রযুক্তি হেঁকে…ইমারত – সভ্যতার কাব্যে- শিল্পে সে ঘরখানি নেই। মধুওয়ালি চলে যাচ্ছিল।—–” মধু চাই…..মধু….”
সেদিন তাকে ডাকলাম। কৌতূহলও এক বিষম দায়। মাধবীলতার মতো শরীর বারান্দার পিলারে চমৎকার বঙ্কিম ভঙ্গিতে রেখে সে জানতে চাইল–কী চাই? আমি চোখের পাতা কাঁপিয়ে কৌতুক জাগালাম।–মধু চাই। মধু। তার শরীর-আকাশে তারা ফুটলো। টুপটুপ ফুল। সে বলে দিলো–খাঁটি মধু বেচি না। তার গ্রহ-স্থির চোখের কালো সে আমার চোখে স্থির রেখেছে। সেখানে উঁচু-নিচু ভাঙচুর। আমি বললাম–ভালো লাগে?
সে বুঝে না-বুঝেই বলল– নাহ। খাঁটি জিনিস বেচি না। বললাম –মন খারাপ? হাসিতে লুটিয়ে গেলো এবার। জবাব পেলাম না। জেদ করে বললাম –মধু কিনব। সে হাসি থামাল।–তোমাকে বেচব না। হাত পাতো।
টপটপ কয়েক ফোঁটা মধু হাত পেতে নিতে নিতে দেখলাম….মেঘ করেছে তার শরীর জুড়ে। তারপর সে চলে গেলো। বলে গেলো– ভালো লাগে। ভালো লাগে না। আর সে কখনো আসেনি। সেদিন মধুওয়ালি চলে গেলে হাতের পাতায় পেয়েছিলাম….স্ফটিক-স্বচ্ছ ক’ফোঁটা বৃষ্টি-বিন্দু।। ভিজেছিলাম।।